দিলীপ চট্টোপাধ্যায়:সাম্প্রতিক হাওড়া শিবপুর এ রাম নবমীতে প্রশাসনিক ব্যর্থতা, হাওড়ার আমতায় আনিস খানের রহস্যজনক মৃত্যু,তারপর বীরভূমের বকটুইতে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দল থেকে ১০ মুসলিম শিশু নারীকে নৃশংস ভাবে পুড়িয়ে গণহত্যাকান্ডের ঘটনা। আই এস এফ বিধায়ক পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকিকে ৪২ দিন জেলে আটকে রাখার ঘটনায় বাঙ্গালী মুসলিমদের বিদ্রোহী মনোভাবের চিন্তায় স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল নেত্রী মমতা জানেন যে, ২১-এর বিধানসভা নর্বাচনে এন আর সি-সিএ এ বিরোধিতাকে
সামনে এনে যুদ্ধ জয়ে পশ্চিমবঙ্গের ৩১ শতাংশ বাঙ্গালী ও উর্দুভাষী মুসলিমদের রাজনৈতিক গত ভাবে সহযোগিতার বিরাট ভূমিকা ছিল। কিন্তু বঙ্গের মাটিতে ঘটে যাওয়া,একের পর এক ঘটনাবলিতে তৃণমূলের সংখ্যালঘু মুসলিম সমর্থনে ভাটা পড়ায় বেজায় চিন্তায় স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভোট কৌশলবিদ প্রশান্ত কিশোর জাতীয় রাজনীতি মন দিলেও পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি সব সময় মনিটার করে চলেছেন।নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর অনুযায়ী,প্রশান্ত কিশোর তাঁর ঘনিষ্ট মহলে বলেছেন যে, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারা রাজ্যেই 40 থেকে 50 শতাংশ মুসলিম সমর্থন হারাতে চলেছেন। এতে পঞ্চায়েত নির্বাচন ও লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক বিপদ নিশ্চিতভাবে বাড়তে চলেছে।
রাজ্যে রাজনৈতিক রাজ্য ওয়াকিবহালদের মতে তৃণমূলের কার্যকলাপে বীতশ্রদ্ধ মুসলিমদের বড় অংশ, বিশেষ করে বাঙ্গালী মুস মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর দিনাজপুরে কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকতে চলেছেন। উত্তর ও দক্ষিণ পরগণায় পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকির আই এস এফ ছাড়াও কংগ্রেস, সিপি এমের দিকে ঝুঁকতে চলেছে। বীরভূম, পূর্ব বর্দ্ধমান, নদীয়া, হুগলি, হাওড়ায় তৃণমূলের সংখ্যালঘু সমর্থনের একাংশ কংগ্রেস, বাম শিবির, আই এস এফের দিকে চলে যেতে পারে। উদারপন্থী বাঙ্গালী মুসলিমদের সামান্য অংশ তীব্র তৃণমূল বিরোধিতা থেকে বিজেপির দিকেও চলে যেতে পারে।
পিকের আরো অনুমান এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে তৃণমূলের। প্রায় ৭০ হাজার পঞ্চায়েত আসনের প্রায় ৩০ হাজার আসন বিরোধীদের দিকে চলে যেতে পারে। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বিজেপি তৃণমূল বিরোধী মুখ্য বিরোধী শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। বিরোধীরা যে ৩০ হাজার আসন পেতে পারে তাঁর মধ্যে বিজেপি একাই ১৫-১৮ হাজার আসন দখল করবে। উত্তরবঙ্গ ছাড়াও দুই মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ায় ভাল ফল করবে বিজেপি। কংগ্রেস মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর দিনাজপুরে ভাল ফল করবে। কংগ্রেস ৬-৭ হাজার আসন পেতে পারে। সি সি এম-বামেরা হাজার চারেক ও আই এস এফ ২ থেকে ৩ হাজার আসন পেতে পারে। প্রশান্ত কিশোর তাঁর ঘনিষ্ট মহলে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে আরো বলেছেন যে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস তাঁর আধিপত্য হারালে লোকসভা নির্বাচনের আগে আরো চাপে পড়ে যাবে।
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের মত বহু অপ্রত্যাশিত ফল হতে পারে। বিজেপির বর্তমান ১৬ আসন পেরিয়ে ২০ আসন জয়ে পৌছে যেতে পারে। কংগ্রেস দলও ৩- ৪টি আসন জিতে যেতে পারে। সি পি এম ও ১-২ আসনে জয় পেতে পারে। জাতীয়স্তরে মোদী বিজেপি বিরোধী রাজনীতির আবহাওয়ার পশ্চিমবঙ্গে হিংসা-সন্ত্রাস- দূর্নীতি মুসলিম ক্ষোভের খেসারত দিতে হতে পারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পিকে ও তাঁর আই প্যাককে এখনও কাজে লাগিয়ে চলেছে মমতা-অভিষেকরা। পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিমান বসুরা যাই বলুন না কেন তৃণমূলস্তরে কংগ্রেস বাম, বিজেপি আই এস এফ ও তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ অংশের মহাজোটে অনিবার্য হয়ে উঠতে চলেছে।
0 comments:
Post a Comment