Indiapost24 Web Desk:বঙ্গে সাম্প্রতিকতম একাধিক উপনির্বাচনে ‘একমাত্র ব্যতিক্রম’ ছিল মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি। উপনির্বাচনে এখন আর বিরোধী প্রার্থীরা তেমন একটা হালে পানি পান না! ১০ জুলাই রাজ্যের চার কেন্দ্রে উপনির্বাচন সম্পন্ন হয়। বাগদা, রায়গঞ্জ, রাণাঘাট দক্ষিণ ও মানিকতলা, চার কেন্দ্রেই বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় পেল তৃণমূল কংগ্রেস। প্রত্যাশিত ভাবেই হার হয়েছে লোকসভা নির্বাচনে পরাজিত বিধ্বস্ত গেরুয়া শিবিরের । অন্যদিকে, কংগ্রেস ও সি পি এমের বাম জোটও চার কেন্দ্রেই জামানত হারিয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেস এদিন উপ নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর একে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী ও উন্নয়নের পক্ষে উপনির্বাচনের রায় বলে দাবি করলেও, বিজেপির দাবি, ছাপ্পা ও রিগিংয়ের জয় হয়েছে তৃণমূলের। সদ্য ৪ জুন অর্থাৎ প্রায় দেড় মাস আগে এই চার কেন্দ্রের তিনটিতেই এগিয়ে ছিল বিজেপি। ব্যবধানও কম ছিল না। শুধু তাই নয়, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ, বাগদা ও রাণাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। যদিও পরে ওই তিন কেন্দ্রের বিধায়করা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন।
বিগত লোকসভা নির্বাচনে এই দলবদলু বিজেপি প্রার্থীরা পরাজিত হন। তাঁদের মধ্যে কৃষ্ণ কল্যানী ও মুকুটমনি অধিকারী ফের উপিনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন। বনগাঁর পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস এবার আর বাগদায় প্রার্থী হননি। সেখানে তৃণমূল প্রার্থী করে রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের মেয়ে মধুপর্ণা ঠাকুরকে। মানিকতলায় তৃণমূলের প্রার্থী প্রয়াত সাধান পান্ডের স্ত্রী সুপ্তি পান্ডে। এই চার তৃণমূল প্রার্থীই বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বাগদা কেন্দ্রে বিজেপি এগিয়েছিল, রাণাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রে ও অন্যদিকে রায়গঞ্জ বিধানসভাতেও পিছিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস।
শুধু মানিকতলায় বিজেপির থেকে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। উপনির্বাচনে মানিকতলা আসন ঘাসফুল শিবির ধরে তো রাখলই পাশাপাশি বাকি তিন কেন্দ্রেও জয় পেয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরী রায়গঞ্জ বিধানসভা এলাকায় ৪২,২০২ ভোটে এগিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালের থেকে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এখানে বিজেপি জয় পায় ২০,৭৪৮ ভোটের ব্যবধানে।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রেই তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যানী বিজেপি প্রার্থীর থেকে ৪৬,৭৩৯ ভোটের ব্যবধানে পিছিয়ে ছিলেন। পর পর তিন তিনটে নির্বাচনেই ব্যপক ভোটে পিছিয়ে ছিল ঘাসফুল শিবির। অবশেষে এই আসনে উপনির্বাচনে জয় হাসিল করতে সক্ষম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। এই প্রথমবার রায়গঞ্জ আসনে জয় পেল তৃণমূল কংগ্রেস।
রাণাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা এলাকায় ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৪৪,৯৭১ ভোটে তৃণমূল প্রার্থীর থেকে এগিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার। এই কেন্দ্রে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জয় পেয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে বিজেপির ব্যবধান ছিল ১৬,৫১৫টি ভোটের। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে এই বিধানসভা থেকে বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার ৩৬,৯৩৬ ভোটে এগিয়েছিলেন। পিছিয়েছিলেন এই মুকুটমনি অধিকারী।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাগদা বিধানসভা এলাকা থেকে ২৪,৪৫৭ ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস বাগদা কেন্দ্র থেকে ৯,৭৯২ ভোটের ব্যবধানে তৃণমূল কংগ্রেসকে পরাজিত করে। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনেও ২০,৬১৪ ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এবারের উপনির্বাচনে শেষমেশ বাগদায় জয় হাসিল করল তৃণমূল। ২০১৬-তে এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী দুলাল বর জয়ী হয়েছিলেন।
মানিকতলা বিধানসভা এলাকায় ২০১৯ লোকসভা ভোটে মাত্র ৮৬১ ভোটের লিড পেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী সাধন পাণ্ডে ২০,২৩৮ ভোটের ব্য়বধানে তৃণমূল প্রার্থীকে পরাজিত করেছিলেন। সাধন পাণ্ডে প্রয়াত হওয়ায় আসনটি শূন্য হয়। সেই আসনে এবার উপনির্বাচনে প্রার্থী হন তাঁর স্ত্রী সুপ্তি পাণ্ডে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এগিয়েছিলেন ৩,৫৭৫ ভোটে। মানিকতলায় ৬২ হাজারের বেশী ভোটে জিতেছে তৃণমূল । অন্য দিকে, রায়গঞ্জে সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে এই বিধানসভা কেন্দ্রে ৪৬ হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকা কৃষ্ণ কল্যানী এবার বিধান সভা উপ নির্বাচনে সেই ৪৬ হাজার ভোটকে পেরিয়ে ৫০ হাজারের বেশি ভোটে বিজয়ী হয়েছেন । বিজেপির সুরে সুর মিলিয়ে কংগ্রেস ও সি পি এমও তৃণমূলের বিজয় কে মানতে না পেরে একে কেন্দ্রীয় আধা সেনাকে পুতুল করে রিগিং, সন্ত্রাস ও গুন্ডামির জয় বলে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন । এদিন রাজ্য বিজেপি দপ্তরে ছিল চরম হতাশার ছবি । উপ নির্বাচনে সামান্যতম প্রতিরোধ করতেও ব্যর্থ হয়েছে গেরুয়া শিবির এমনটাই মনে করছেন বিজেপির রাজ্য থেকে জেলা স্তরের নেতারা ।
0 comments:
Post a Comment