নবান্ন অভিযানের নামে হামলা,বিক্ষোভ,তাণ্ডব,পুলিশ আক্রমণ,রক্তক্ষরণ,যানজট,সাধারণ পথচারীদের হেনস্থা এটাই কি ছিল আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ?

 

Joytiprakash Mukherjee,Indiapost24 Web Desk :-

আরজি করের তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত অপরাধী বা অপরাধীদের কঠোর শাস্তির দাবি 'উই ওয়াণ্ট জাস্টিস' অবশ্যই সঙ্গত ও শুরু থেকেই এই দাবি উঠেছে,একই দাবিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সহ সাধারণ মানুষ পথে নেমেছেন!'রাত দখল' থেকে নানা সামাজিক কর্মসূচি নিয়ে চলেছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আন্দোলন!এদিকে,শাসকদল তৃণমূলকে লাগাতার আক্রমণ করে চলেছে বিরোধীরা। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। তারপর সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ ও বিভিন্ন হসপিটাল গুলিতে কর্মবিরোধীর প্রত্যাহার!সিবিআই-এর হাতে তদন্তভার দিয়ে সপ্তাহ দুয়েক কেটে গেলেও সমাজের সর্বত্রই আন্দোলনের ঝাঁজ!এই পরিস্থিতিতে,'ছাত্র সমাজ' নাম নিয়ে একটি সংগঠন শান্তিপূর্ণভাবে নবান্ন অভিযানের ডাক দেয়। আর সেই আন্দোলন ঘিরে দফায় দফায় উত্তেজনা,সব মিলিয়ে রণক্ষেত্রের রূপ নেয় রাজপথ!ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে,এই  সংগঠনের নাম আগে কখনো শোনা যায়নি।

 আরজিকর কাণ্ডে যুক্ত অপরাধীর শাস্তির পরিবর্তে এদের দাবি মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ। সন্দেহের দানাবাঁধে সুশীল নাগরিক সমাজ তথা বিভিন্ন মহলে!এ বিষয়ে তৃণমূল নেতা কুনাল ঘোষ বলেন,বাংলার বিরুদ্ধে চক্রান্ত।নবান্ন অভিযান নয়, সমাজবিরোধীদের অভিযান। এখন জাস্টিস নয়, চেয়ার চাই।



বরাবর নিজেদের অরাজনৈতিক দল বলে দাবি করে এসেছে সংগঠনটি। কিন্তু আজ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের মূল পর্ব শুরু হতেই বদলে যায় চিত্রটা।

মুখে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বলা হলেও সারাদিন ধরে যে যে চিত্রগুলি সামনে এসেছে তাতে অশান্তির আঁচ ছিল স্পষ্ট। এমনকি আন্দোলনকারী হিসাবে যাদের দ্যাখা যাচ্ছে তাদের একটা বড় অংশ যে ছাত্র নয় সেটাও স্পষ্ট। তাছাড়া ব্যারিকেড ভাঙা বা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইঁট,পাথর ছোড়া,গাড়ি ভাঙচুর,আগুন ধরিয়ে দেওয়া,আক্রমণ করা কখনোই ছাত্র সুলভ নয়। এইগুলো তো অপরাধ জগতে লিপ্ত সমাজবিরোধীদের কাজ!  বিশেষজ্ঞ মহলের প্রশ্ন,এটা কি শিক্ষিত যুব ছাত্র সমাজের আন্দোলন নাকি বিক্ষুব্ধ দুষ্কৃতিদের সন্ত্রাস?


বাংলার সাধারণ মানুষ আজ প্রত্যক্ষ করলেন আন্দোলনের  নেতৃত্বে ছিলেন কোন একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের অন্যতম দুঁদে নেতারা!সর্বশক্তি নিয়োগ করেও পরপর দু'বার  দলটি এই রাজ্যের মানুষের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।তাই কি এবার,আরএসএস-যুব মোর্চার ভরকেন্দ্রে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা এই সংগঠনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলটি এই রাজ্যে ঘুরপথে ক্ষমতা দখলের অলীক স্বপ্ন দেখছে?  


 যাইহোক,নবান্ন অভিযানে তথাকথিত ছাত্র  সমাজের 'দাবি এক,দফা এক,মমতার পদত্যাগ'। এটা তো পুরোপুরি রাজনৈতিক দাবি! কোনো ছাত্র সমাজ কি এই ধরনের দাবি তুলতে পারে? এসব রাজনৈতিক দলগুলোর  মানায়। যদিও একটি রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই বিক্ষোভ তা আজ খুবই স্পষ্ট!এই বিষয়ে টলিউড খ্যাত বিশিষ্ট অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী মন্তব্য করেন 'আজ ২৭ অগস্ট ছাত্র সমাজের নবান্ন অভিযান যারা ডেকেছে, তারাই বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তির পর মালা পরায়, কাঠুয়াতে আর উন্নাওতে ধর্ষকদের সমর্থনে জাতীয় পতাকা নিয়ে মিছিল বের করে, এরাই ব্রিজভূষণ সিং-এর ঢাল হয়ে কুস্তিগীরদের আন্দোলনকে দমন করে, আর হাথারাসে নির্যাতিতার নিথর শরীরকে পুড়িয়ে দেয় প্রমাণ লোপাটের জন্য। মনিপুরে প্রশাসনের মদতে গন-ধর্ষণ সংগঠিত করে।'


রাজনৈতিক আন্দোলন তার নিজের পথে চলুক। অপ্রয়োজনীয় ভাবে ছাত্র সমাজের দায় দিয়ে দুষ্কৃতীদের একত্রিত করে নবান্ন অভিযানের নামে হামলা,বিক্ষোভ,তাণ্ডব,পুলিশ আক্রমণ,রক্তক্ষরণ,যানজট,সাধারণ পথচারীদের হেনস্থা এতেই কি অপরাধীদের শাস্তি মিলবে আর এটাই কি ছিল আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ? এতে কি আদৌ বাড়তে পারে রাজনৈতিক টিআরপি?প্রশ্ন সাধারণ মানুষের!সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে ছাত্র সমাজ বা সাধারণ মানুষকে ব্যবহার না করে গণ আন্দোলন করুক। যে আন্দোলনে থাকবে না দলীয় পতাকা, রাজনৈতিক স্লোগান,থাকবে না কোন সন্ত্রাস কোন আক্রমণ। তার প্রভাব অনেক বেশি। আন্না হাজারে তার প্রমাণ।

Share on Google Plus Share on Whatsapp



0 comments:

Post a Comment