Indiapost24 Web Desk:সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির দেওয়া ডেডলাইন ছিল, মঙ্গলবার বিকেল ৫টা। কিন্তু সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও কাজে যোগ দিলেন না জুনিয়র ডাক্তাররা। সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া ডেড লাইনের পরেও আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে না ফেরায় আলোচনার টেবিলে বসার জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের নবান্নে আমন্ত্রণ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। রাত পর্যন্ত নবান্নে বসে থাকলেও মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া আলোচনা প্রস্তাবেও সাড়া দিলেন না আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা। তার পরিবর্তে সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে নতুন করে পাঁচ দফা দাবি পেশ করে অবস্থান শুরু করেছে তারা। গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টে আর জি কর মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় স্পষ্ট ভাষায় আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হল। অন্য সিনিয়র চিকিৎসকরা কাজ করছে বলে আমরা করব না, এটা হতে পারে না। আমরা জানি কি ঘটছে। চিকিৎসকরা সিস্টেমের বাইরে নয়। কাজে যোগ দিতে হবে। রোগীদের পরিষেবা দিতে হবে। মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে তারা কাজে যোগ দিলে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ করা যাবে না। যদি কাজে যোগ না দেন তারপর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হলে কাউকে দায়ী করবেন না।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির এই নির্দেশের পরেই নবান্ন থেকে মমতা নিজেও আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, কাজে ফিরুন, আলোচনায় বসতে আমি সবসময় প্রস্তুত। যদি কিছু বলার থাকে, ৫-১০ জনের একটি প্রতিনিধিদল আনুন, আমরা আলোচনা করব। মুখ্যমন্ত্রীর এই অনুরোধ এবং আলোচনায় বসার প্রস্তাবের কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজ্যের মুখ্য সচিব নবান্ন থেকে প্রেস কনফারেন্স করে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে দেন, আপনাদের দাবি মতো সমস্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে সরকার। আপনারা কাজে ফিরুন। কারো বিরুদ্ধে সরকার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ সত্বেও আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফিরলেন না আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা। তার পরিবর্তে নতুন পাঁচ দফা দাবি পত্র তৈরি করে সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের উদ্দেশ্যে প্রতিবাদ মিছিল করেন তারা। এতদিন যেখানে দাবি ছিল নির্যাতিতার বিচার চাই এবং নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে, প্রথমে কলকাতা হাইকোর্ট এবং পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নির্যাতিতার বিচারের দায়িত্ব এক দিকে যেমন ন্যস্ত হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সিবিআই এর হাতে অন্যদিকে ডাক্তারদের নিরাপত্তার জন্য আরজিকর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোতায়েন হয়েছে বিশাল সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাই এবারে রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রায় সমস্ত শীর্ষ কর্তাকেই অপসারণের নতুন দাবি নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনে ঢোকার চেষ্টা করে তারা। যদিও স্বাস্থ্য ভবনের মূল গেটের কিছুটা দূরেই তাদেরকে আটকে দেয় পুলিশ। সেখানেই নতুন করে অবস্থান-বিক্ষোভের ঘোষণা করে আন্দোলনকারীরা। সঙ্গে হুঁশিয়ারি, দাবি যতক্ষণ মানা হচ্ছে, ততক্ষণে স্বাস্থ্যভবনের সামনে চলবে না ধরনা।
আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করতে থাকায় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে স্বাস্থ্য সচিব নারায়ন স্বরূপ নিগম তাদের কাছে ইমেইল পাঠান মুখ্যমন্ত্রীর তরফে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সেই আলোচনার প্রস্তাব গ্রহণ করবে না বলে জানিয়ে দেয় জুনিয়র ডাক্তাররা। সন্ধ্যের সাড়ে সাতটা পর্যন্ত আলোচনার জন্য নবান্নে অপেক্ষা করতে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মুখ্য সচিব এবং স্বাস্থ্য সচিব সহ রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকরা।
পরে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান, ৬টা ১০ মিনিটে স্বাস্থ্য সচিবের কাছ থেকে ইমেল গিয়েছিল। ১০ জনকে আসার কথা বলা হয়। ১০ জনের বেশি এলেও অসুবিধা ছিল না। কিন্তু, সাড়ে সাতটা পর্যন্ত ইমেলের জবাব আসেনি। সাড়ে ৭টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন থেকে বেরোন।
0 comments:
Post a Comment