Indiapost24 Web Desk:শারদোৎসবের কারণে আপাতত যুদ্ধ বিরোধী ফিরহাদ হাকিম ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে চলা দ্বন্দ্ব যুদ্ধে। অক্টোবর মাসের প্রথম দিনেই চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। আর কলকাতার দুর্গাপূজোয় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মহানাগরিক। তাই আপাতত স্বস্তি শাসক তৃণমূলের অন্দরমহলে। ২৭ সেপ্টেম্বর আচমকা জানা যায় অভিষেকের দফতর থেকে শেক্সপিয়র সরণী থানায় একটি অভিযোগ জানানো হয়েছে কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদের ওএসডি কালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেকের নাম ভাঙিয়ে তোলাবাজি করেছেন তিনি। এমন খবর জানাজানি হতে রাজ্য রাজনীতিতে চাঞ্চল্য শুরু হয়। তোলপাড় শুরু হয় শাসকদলের অন্দরেও। এমন অভিযোগের পর ক্ষোভের সুরে মেয়র জানিয়েছিলেন,যদি তাঁর ওএসডির বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থেকেই থাকে সে ক্ষেত্রে পুলিশে অভিযোগ না করে সরাসরি তাঁকেই জানাতে পারতেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
মেয়র প্রকাশ্যে মন্তব্য করলেও অভিষেক বা তাঁর কোনও অনুগামী এই সংক্রান্ত বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেনি। তৃণমূল সূত্রে জানা যায়,এই খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।দু'পক্ষের সঙ্গে পৃথক ভাবে কথা বলে নিরস্ত করেন দলের দুই শীর্ষ নেতাকে। এ যাত্রায় দুর্গাপুজোর কারণে সাময়িক যুদ্ধ বিরোধী হলেও, পরস্পরের বিরুদ্ধে ফুঁসছে দুই শিবিরের নেতারা। বছর দেড়েক আগে শহরের পার্কিং ফি বৃদ্ধি নিয়েও সংঘাত হয়েছিল অভিষেক-ফিরহাদের মধ্যে। সেবার অভিষেক ঘনিষ্ঠ নেতা কুনাল ঘোষ সাংবাদিক বৈঠক করে কলকাতা পুরসভার বলবৎ করা পার্কিং ফি বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেবারও মেয়র ফিরহাদ বলেছিলেন, "দলের যদি কোনও অবস্থান থেকেই থাকে, তবে তা সরাসরি আমাকে জানানো যেত। সাংবাদিক বৈঠক করে তা জানানোর প্রয়োজন ছিল না।"
সে যাত্রায় মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপে শহরের পার্কিং ফি বৃদ্ধি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছিল কলকাতা পুরসভা। আর তা নিয়ে বিশেষ ক্ষোভ দেখাননি মেয়র। কিন্তু এ বার মেয়রের ওএসডি অভিষেকের নাম করে তোলাবাজি করেছেন বলে, অভিযোগ করায়, দলের ওপর কিছুটা হলেও অভিমানী হয়েছেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী। তাঁর ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, "মেয়র মনে করছেন,তাঁর ওএসডির বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ এনে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তাঁর কলকাতা পুরসভা পরিচালনা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। দলের সর্বোচ্চ নেতা যদি মেয়র প্রসঙ্গে এমন ভাবনা পোষণ করেন,তবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি মেয়র তথা কলকাতা পুরসভাকে দুর্নীতিপরায়ণ বলতে অতিরিক্ত জোশ পাবে। তাই কোনও অভিযোগ থাকলে প্রকাশ্যে না জানালে ভালো করত অভিষেকের দফতর।"
আপাতত মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ এবং দেবী দুর্গার আগমন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করলেও, এই শান্তি তৃণমূলের অন্দরমহলে কত দিনে বহাল থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ,পার্কিং ফি বিতর্কের সময়ও,সর্বোচ্চ নেত্রীকেই দুজনের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করতে হয়েছিল। আর এ বার উৎসবের পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতির স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছেন মমতা। বর্তমানে রাজ্য সরকার আরজিকর হাসপাতালের ঘটনা নিয়ে বেজায় অস্বস্তিতে রয়েছে। এ ছাড়াও তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েও বেশ চাপে রয়েছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এমতাবস্থায় দলের দুই নেতা যদি পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা শুরু করেন, তাহলে তা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভালো বিজ্ঞাপন হবে না শাসক তৃণমূলের পক্ষে। এ বিষয়ে নিশ্চিত বাংলার রাজনীতির কারবারিরা। কিন্তু ফিরহাদ বনাম অভিষেকের এই দ্বন্দ্ব যে বাংলার রাজনৈতিক মহলকে আগামী দিনেও রসদ যোগাবে সে বিষয়ে একমত তারা। অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে অভিষেক আবারো কলকাতায় ফিরলে এই অধ্যায়ের নতুন সংযোজন হবে কিনা সেদিকেই তাকিয়ে বাংলার রাজনৈতিক মহল।
0 comments:
Post a Comment