দুর্নীতি ও বেকারত্ব চলতেই থাকবে?

 



Indiapost24 Webdesk: দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের প্রায় শুরু থেকেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করে। সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। দেশে বেকারত্বের হার ঊর্ধ্বমুখী। মূল সমস্যাকে দূরে সরিয়ে জিএসটির সর্বোচ্চ হার ১৮ শতাংশর কম করতে হবে সেই দাবি তুলে দীর্ঘদিন বিজেপির নেতৃত্বে সংসদ অচল করে দেওয়া হয়। 


       এই পরিস্থিতিতে তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বিজেপি সামনে আনে। বিভিন্ন জনসভায় তার নাটকীয় ভঙ্গিতে ভাষণ,বছরে দু'কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি সহ আরও অনেক 'রঙিন' প্রতিশ্রুতিতে মানুষ মুগ্ধ হয়ে বিজেপিকে ভোট দেয় এবং ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতা লাভ করে। প্রত্যাশামত নরেন্দ্র মোদী দেশের প্রধানমন্ত্রী হন। 

দুর্নীতি রোধে তার প্রতিশ্রুতি ছিল না 'খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা'। কিন্তু আজও তার দেওয়া কোনো প্রতিশ্রুতিই রক্ষিত হয়নি। 


      মোদীর প্রতিশ্রুতি ছিল বছরে ২ কোটি বেকারের চাকরির। প্রতিশ্রুতি পূরণ তো দূরের কথা উল্টে বহু শূন্যপদই বিলোপ করে দেওয়া হচ্ছে। সরকারি হিসাবে কেন্দ্র সরকার পরিচালিত বিভিন্ন দপ্তরে প্রায় দশ লক্ষ পদ শূন্য। শুধু রেলেই প্রায় তিন লক্ষাধিক পদ ফাঁকা। সরকারি কাজেও চলছে ব্যাপক অস্থায়ীকরণ। কংগ্রেস ও বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের বেসরকারিকরণ কর্মসূচি চাকরির বাজারকে আরও সংকুচিত করছে। ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার মতো নিয়োগের সম্ভাবনা দ্যাখা যাচ্ছেনা। বেকারত্বের পরিস্থিতি চরম অনিশ্চয়তার দিকে যুবসমাজকে ঠেলে দিচ্ছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, বিভিন্ন রাজ্যেই যুবসমাজের অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে লুঠের সাম্রাজ্য গড়ে উঠছে। 


        দেশের প্রতিটি রাজ্যে সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এখনও বিজেপি বিরোধী দল। এর মধ্যেই কল্যাণী এইমস নিয়োগ দুর্নীতিতে তারা যুক্ত। কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিএম, তৃণমূল সহ প্রতিটি রাজ্যের শাসকদল নিয়োগ দুর্নীতি থেকে শুরু করে সমস্ত রকম দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। অথচ তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

 যারা অপরাধ করেছে তাদের শাস্তি হোক।  দুর্নীতির খাতায় যেসব এলাকার নাম উঠেছে সেইসব এলাকার সমস্ত জনপ্রতিনিধি সহ সরকারি কর্মচারিদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হোক। 


       এইরাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ। কখনো অভিযোগ উঠেছে ভুল প্রশ্ন করা হয়েছে। কখনো বলা হচ্ছে ঠিকমত খাতা দ্যাখা হয়নি, তালিকায় ভুল আছে ইত্যাদি। এত ভুলের জন্য কারও বেতন বন্ধ হয়নি। অথচ শাস্তি পাচ্ছে একদল শিক্ষিত বেকার। আট বছর পর উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ হচ্ছে। ওদের প্রাপ্য আট বছরের বেতন কে দেবে? শোনা যাচ্ছে কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের কিছু খাতা না দেখেই নাকি নম্বর দেওয়া হয়েছে। ওইসব শিক্ষকদের কি সাসপেন্ড করা হয়েছে?


      নির্বাচন এলে নেতাদের দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা হয়। অথচ এগুলো বন্ধ করার জন্য কোনো সদর্থক ভূমিকা কখনো নেওয়া হয়না। উল্টে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে সে অন্যদলে যোগ দিয়ে শুদ্ধ হয়ে যায়। ফলে দুর্নীতি বন্ধ হয়না, থেকেই যায়। 


      বেকারত্ব নিয়ে বড় বড় কথা বলা হলেও কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারগুলো বাজেট পেশ করার সময় বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য সুস্পষ্ট দিশা দেখাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। বন্ধ কলকারখানা চালু করার কথা উঠলে অর্থের অভাব বলা হয়। অথচ কর্পোরেট সেক্টরগুলোর বিপুল পরিমাণ ঋণ বা কর মকুব করতে কোনো সমস্যা হয়না। 


      বিভিন্ন বিষয়ে সর্বদলীয় বৈঠকের কথা শোনা গেলেও আজ পর্যন্ত বেকারত্ব দূরীকরণ ও দেশ থেকে দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন করার জন্য কখনো কোনো সার্বিক উদ্যোগ নেওয়া হয়না। ফলে এই দুটি জ্যামিতিক হারে তাদের শাখাপ্রশাখা বৃদ্ধি করেই চলেছে। এর থেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসবে কে!!!

Share on Google Plus Share on Whatsapp



0 comments:

Post a Comment